

আমাদের শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গ যেন সুস্থ তাহকে আর ঠিকভাবে যেন কাজ করে, তার জন্য শরীরের যত্ন নেওয়া বা রক্ষনাবেক্ষন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এই শরীরের টেক-কেয়ারের এর মধ্যে “ব্লাড প্রেশার কন্ট্রোল” একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ব্লাড প্রেশার যদি নিয়ন্ত্রনে না থাকে অর্থাৎ, ব্লাড প্রেশার বেড়ে গেলে আবার কমে গেলে বা নিম্ন রক্তচাপ থাকলে শরীরে অনেক সমস্যা দেখা দিবে কারণ ব্লাড প্রেশার সরাসরি হার্টের সঙ্গে জড়িত।
বিশ্বজুড়ে হাই ব্লাড প্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপ “সাইলেন্ট কিলার” হিসেবে পরিচিত। অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও অনেক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগে থাকেন। কারণ, এ সমস্যার প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো উপসর্গ থাকে না যা ফলে হাই ব্লাড প্রেশার রোগী নিজের অজান্তেই এই রোগ দীর্ঘদিন বয়ে বেড়ান। কিন্তু, নীরবে এই উচ্চ রক্তচাপের ফলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন: হৃদযন্ত্র, কিডনি, মস্তিষ্ক, রক্তনালী এবং চোখের ক্ষতি করতে থাকে। তাই সবারই উচিত নিয়মিত ব্লাড প্রেশার সঠিকভাবে পরিমাপ করা যাতে সমস্যা শুরু হওয়ার আগেই উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত করা যায়।
আজকের এই আর্টিকেলটিতে জানাবো হাই ব্লাড প্রেশার কি আর সহজে এবং সঠিক নিয়মে ব্লাড প্রেশার মাপার উপায়।
হাই ব্লাড প্রেশার কি?
হৃৎপিণ্ডের ভেইনে রক্ত প্রবাহের চাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকলে সেটিকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের স্বাভাবিক রক্তচাপ থাকবে ১২০/৮০ মিলিমিটার পারদের নিচে। কারও রক্তচাপ যদি ১৪০/৯০ মিলিমিটার পারদ বা তার বেশি হয় তাহলে উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। যদিও বয়সভেদে রক্তচাপ খানিকটা বেশি বা কম হতে পারে।
তবে এখন উচ্চ রক্তচাপ আর বয়সের উপর নির্ভর করে না। খুব অল্প বয়স থেকেই মানুষ এখন উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় ভোগেন। অনিয়মিত জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন মূলত এই কারণগুলোর জন্য খুব অল্প বয়স থেকেই এখন উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়।


কীসে মাপবেন ব্লাড প্রেশার?
ব্লাড প্রেশার জানার যন্ত্রকে ইংরেজিতে বলা হয় “স্ফিগমোম্যানোমিটার (Sphygmomanometer)”। এই যন্ত্র দিয়েই হাসপাতালে, ক্লিনিকে বা চিকিৎসকের চেম্বারে রক্তচাপ পরিমাপ করা হয়। বর্তমানে বাজারে ডিজিটাল ও অ্যানালগ দুই ধরনের ব্লাড প্রেশার মাপার যন্ত্র পাওয়া যায়। আর ডিজিটাল মেশিনের মাধ্যমে বাড়িতে বসেই মাপতে পারবেন ব্লাড প্রেশার।
সহজে এবং সঠিক নিয়মে ব্লাড প্রেশার মাপার স্টেপস
১. রোগী চেয়ারে পেছনে হেলান দিয়ে বসে, দুই হাত টেবিলের উপর থাকবে। রোগীর হাত এমনভাবে রাখতে হবে যেন হার্টের সমতলে থাকতে হবে। হাফ হাতা অথবা ঢিলা জামা পরা ভালো। জামার হাতা ভাজ করে উঠিয়ে রাখার সময় যেন টাইট হয়ে না যায়। ব্লাড প্রেশার মাপার কাপ এবার কনুই থেকে ২.৫ সে.মি উপরে বাঁধুন। খুব ঢিলা অথবা টাইট করে বাঁধা যাবে না। স্থূল ব্যক্তি ও বাচ্চাদের কাফের সাইজ ভিন্ন হয়।
২. কনুইয়ের উপরে হাত দিয়ে ব্রাকিয়াল ধমনির অবস্থান নির্ণয় করে স্টেথোস্কোপের ডায়াফ্রাম বসাতে হবে। ডায়াফ্রাম কাপড়ের উপরে রাখলে ডায়াফ্রাম ও কাপড়ের ঘর্ষণে শব্দ শুনতে অসুবিধা হয়।
৩. মিটার স্কেলটি হার্টের সমতলে রাখতে হবে।
৪. অনেক সময় দেখা যায় প্রেশার মাপতে গিয়ে প্রকৃত সিস্টোলিক প্রেশার এবং শব্দ শুনতে পাওয়ার মাঝে একটা গ্যাপ তৈরি হয়। এটাই অসকালটেটরি গ্যাপ। এটা এড়ানোর জন্য সব প্রথমে পালপেটরি মেথডে সিস্টোলিক প্রেশার দেখতে হবে।
কিছু টিপস
- রক্তচাপের মাত্রা কখনো একটু বেশি পেলে চিন্তিত বা অস্থির হবেন না। দুই মিনিটের মতো বিশ্রাম নিয়ে আবার মেপে দেখুন।
- পরপর দুই দিন হাই ব্লাড প্রেশার পেলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। দুই মিনিটের ব্যবধানে সিস্টোলিক ১৮০ ও ডায়াস্টোলিক ১২০ মিলিমিটার পেলে সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন বা হাসপাতালে যাবেন।
- চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে রক্তচাপের ওষুধের মাত্রা পরিবর্তন বা বন্ধ করা যাবে না।
- ব্লাড প্রেশার হাই হলে অতিরিক্ত কোলেস্টরেল জাতীয় খাবার পরিহার করে ফলমূল আর শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
লেখক: তানভীর