সানস্ক্রিনের গুরুত্ব এবং সঠিক নিয়মে এর ব্যবহার

স্কিনের সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম বড় একটি সমস্যা হলো সানবার্ন এর সমস্যা। সূর্যের আলট্রাভায়োলেট রশ্মি আমাদের ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। এই আলট্রাভায়োলেট রশ্মি বা সানবার্ন থেকে নিজের স্কিনকে সুরক্ষা দেয়াই মূলত সানস্ক্রিনের কাজ। সানস্ক্রিনে থাকে এসপিএফ (SPF)। আমরা অনেকেই এই শব্দটির সাথে পরিচিত। তবে এর পূর্ণ রূপটি কি জানা আছে? এসপিএফ (SPF) মানে হলো, সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর (Sun Protection Factor)। নাম শুনেই বুঝা যাচ্ছে এর কাজ সম্পর্কে তাই না? আসলে এই এসপিএফ (SPF) এর মেইন কাজটাই হচ্ছে সূর্যের আলট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে আমাদের ত্বককে সুরক্ষা দেওয়া।

কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে সানস্ক্রিন ব্যবহার না করলে?

আমাদের স্কিন প্রতিনিয়ত দুই ধরনের সূর্যরশ্মি ফেইস করে থাকে। একটি ইউভি এ (UV A) রশ্মি, অন্যটি ইউভি বি (UV B) রশ্মি।

ইউভি এ (UV A) রশ্মি: এটি আমাদের ত্বকের ভেতর পর্যন্ত যেয়ে আমাদের ত্বকের কোলাজেন প্রোডাকশন কমিয়ে দেয়। যার ফলে আমাদের ত্বকে বয়সের ছাপ বোঝা যায়, চামড়া কুঁচকে যায়, বলিরেখা দেখা দেওয়া সহ ফাইন লাইনের মত সমস্যা দেখা দেয়। পাশাপাশি রিংকেলস এর সমস্যাও দেখা দেয়।

ইউভি বি (UV B) রশ্মি: এটি মূলত আমাদের ত্বকের সানবার্ন এর মত সমস্যার জন্যে দায়ী। এছাড়াও আমাদের ত্বকে ছোপ ছোপ কালো দাগ বা পিগমেন্টেশনের সমস্যাগুলোও হয় এই ইউভি বি (UV B) রশ্মির কারণে।

কীভাবে এসপিএফ (SPF) কাজ করে?

 আমরা জেনেছি, এসপিএফ (SPF) মানে হলো- সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর (Sun Protection Factor)। এই এসপিএফ (SPF) এর উপরেই নির্ভর করে আপনার সানস্ক্রিন সান ড্যামেজ থেকে আপনার স্কিনকে কত সময়ের জন্যে সুরক্ষা দিতে পারবে। যখন কেউ এসপিএফ (SPF) ১৫ এর একটি সানস্ক্রিন ইউজ করে সেক্ষত্রে সে এসপিএফ (SPF) ১৫ কে ১০ দিয়ে গুণ করবে। গুণ করে যত মিনিট পাওয়া যাবে, সে তত সময়ের জন্যে সূর্যরশ্মি থেকে প্রোটেকটেড থাকবে। ফলাফল আসে ১৫০ মিনিট। অর্থাৎ ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের জন্যে আপনি নিশ্চিন্ত! ঠিক এভাবেই যে যেই এসপিএফ (SPF) ব্যবহার করছেন তাকে ১০ দিয়ে গুণ দিলেই পেয়ে যাবেন আপনি কতক্ষণ ইউভি বি সূর্যরশ্মি থেকে সুরক্ষিত আছেন। মূলত, এজন্যেই সানস্ক্রিন বাছাই করার সময় অনেকেই বেশি এসপিএফ (SPF) যুক্ত সানস্ক্রিন প্রিফার করে থাকে।

পি এ প্লাস কী?

সানস্ক্রিনের গায়ে অনেক সময়ই পি এ প্লাস (PA+) থেকে পি এ প্লাস প্লাস (PA++) এবং পি এ প্লাস প্লাস প্লাস (PA+++) পর্যন্ত দেখা যায়। এর মানে কী আমরা অনেকেই জানি না! এটি দিয়ে মূলত বুঝায় আমাদের বাছাই করা সানস্ক্রিনটি  ইউভি বি (UV B) রশ্মির পাশাপাশি কত ভালো ইউভি এ (UV A) রশ্মি থেকেও আমাদের সুরক্ষা দিতে পারবে। তার মানে, যত বেশি প্লাস তত বেশি ইউভি এ (UV A) রশ্মি থেকে প্রোটেকশন!

কীভাবে বুঝবো কোনটি ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন এবং কোনটি কেমিক্যাল সানস্ক্রিন?

সানস্ক্রিন কেনার ক্ষেত্রে আমাদের অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকে যে, “ফিজিক্যাল না কেমিক্যাল?” আমরা অধিকাংশরাই এই দুই সানস্ক্রিনের মধ্যকার পার্থক্য জানি না। চলুন জেনে নেই, কীভাবে বুঝবেন কোনটা ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন এবং কোনটা কেমিক্যাল সানস্ক্রিন?

ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন: টাইটানিয়াম ডাইঅক্সাইড এবং জিংক-অক্সাইড এগুলো মূলত ফিজিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টস। তাই যদি সানস্ক্রিনের ইনগ্রেডিয়েন্টস লিস্টে এমন উপাদানগুলো দেখতে পান, তবে বুঝে নিবেন তা ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন। ফিজিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টস এর জন্যে ক্ষতিকর ইউভি রশ্মি আমাদের স্কিনের স্তরে পৌঁছে আবার রিফ্লেক্ট করে বাইরে বের হয়ে যায়।

কেমিক্যাল সানস্ক্রিন: যদি সানস্ক্রিনের ইনগ্রেডিয়েন্টস লিস্টে অ্যাভোবেনজোন, অক্সিবেনজোন এ ধরনের উপাদান থাকে, তবে বুঝে নিতে হবে তা কেমিক্যাল সানস্ক্রিন। কেমিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টগুলো ইউভি এ (UV A) রশ্মি শোষণ করে তার কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

এই ইনগ্রেডিয়েন্টসগুলো মূলত ইউভি এ (UV A) রশ্মি এবং ইউভি বি (UV B) রশ্মি প্রতিরোধে কাজ করে। কোনো কোনো ইনগ্রেডিয়েন্টস শুধু ইউভি এ (UV A) রশ্মির জন্যে কাজ করে। কোনটি আবার ইউভি বি (UV B) রশ্মির জন্যে। কোনো কোনটি আবার কাজ করে দুটির জন্যেই

সানস্ক্রিন কতটুকু পরিমাণে লাগাবো?

খুব সহজেই যদি বুঝাতে হয়, তবে আপনি যতটুকু পরিমাণ ময়েশ্চারাইজিং ক্রীম ব্যবহার করেন তার চেয়ে একটু বেশি পরিমাণে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন আপনার ফুল ফেইস যেন ভালোভাবে কভার হয়।

সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই নিয়ে কমন কিছু প্রশ্ন উত্তর

সানস্ক্রিন নিয়ে আমাদের অনেকের কমন কিছু প্রশ্ন রয়েছে। বিশেষ করে সানস্ক্রিন কখন লাগাতে হয়? কীভাবে লাগাতে হয় এগুলো নিয়ে! চলুন, আজকে আপনাদের তেমন কিছু প্রশ্নের উত্তর জেনে নেওয়া যাক!

১. দিনের বেলায় বাসায় থাকলেও কি সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে?

হ্যাঁ, অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। দিনের বেলায় আপনি যেখানেই থাকেন সূর্যের আলো কিন্তু কোনো না কোনো ভাবে আপনাকে স্পর্শ করছেই। তাই দিনের বেলায় আপনি বাইরে থাকুন বা বাসার ভেতরে, সানস্ক্রিন ব্যবহার করা আবশ্যক!

২. বাহিরে রোদ কম থাকলে বা আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও কি সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে?

হ্যাঁ, রোদ কম বা আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও সানস্ক্রিন লাগাতে ভুল করবেন না।

৩. রান্না করতে গেলে বা চুলার কাছে গেলে কি সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে?

হ্যাঁ! দিনের বেলা যখনই রান্না ঘরে যাবেন বা চুলার পাশে থেকে কোনো কাজ করবেন অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে ভুলবেন না!

৪. বাসায় থাকলেও কি বেশি এসপিএফ (SPF) যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে?

না! বাসায় থাকলে চেষ্টা করবেন এমন সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে যেটির এসপিএফ ১৫ থেকে ৩০ এর নিচে। বাইরে বের হলে, চেষ্টা করবেন এসপিএফ ৩০ এর উপরে এমন সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে।

৫. বাইরে বের হওয়ার কতক্ষণ আগে সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করবো?

স্কিনকেয়ারের যেকোনো প্রোডাক্টই একটার পর একটা অ্যাপ্লাই করা ঠিক নয়। অ্যাপ্লাই করার পর স্কিনের সাথে এডজাস্ট হওয়ার জন্যে কিছুক্ষণ সময় দিতে হয়। তাই চেষ্টা করবেন বাইরে বের হওয়ার আগে অন্তত ২০ থেকে ৩০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করতে।

৬. বাসায় থাকলেও কি সানস্ক্রিন রি-অ্যাপ্লাই করতে হবে?

হ্যাঁ! বিভিন্ন এসপিএফ ভেদে প্রতি ৩-৫ ঘন্টা পরপর সানস্ক্রিন রি-অ্যাপ্লাই করা জরুরী। এসপিএফ এর পরিমাণ যত বেশি থাকে এটি তত বেশি সময় ধরে আমাদের স্কিনের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। সাধারণত কয়েক ঘন্টা পরই আমাদের স্কিনে আমরা যেই স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টই ব্যবহার করিনা কেন, তা মেল্ট হয়ে যায়। তাই কার্যকারিতা বজায় রাখতে অবশ্যই সানস্ক্রিন রি-অ্যাপ্লাই করতে হবে। এবং বাসায় থাকলেও নিয়ম মত সানস্ক্রিন রি-অ্যাপ্লাই করতে হবে। যেহেতু বাসায় ব্যবহার করা সানস্ক্রিন গুলোতে এসপিএফ এর পরিমাণ তুলনামূলক কম থাকে। তাই এর ক্ষমতাও একটু কম থাকে। চেষ্টা করবেন ২ থেকে ৩ ঘণ্টা পর পর সানস্ক্রিন পুনরায় অ্যাপ্লাই করতে।

৭. আগে ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করবো না সানস্ক্রিন?

অবশ্যই আগে ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করে এরপর সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করতে হবে।

স্কিনের প্রটেকশন এর জন্য হাই কোয়ালিটি সানস্ক্রিন কিনতে চাইলে, স্কিন স্টোরির অফিসিয়াল পেজ অথবা ওয়েবসাইট থেকে প্রোডাক্ট পারচেজ করতে পারেন https://skinstorybd.com/। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, সুন্দর থাকবেন।

লেখক: তানভীর

Leave a Reply